
‘নাটকে মা হতে হতে সবার মা হয়ে গিয়েছি’
আমিনুল ইসলাম শান্তদিলারা জামান। টিভি নাটকে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। সব প্রজন্মের দর্শকের কাছেই তিনি শ্রদ্ধেয় অভিনেত্রী। নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে সবার ‘মা’ হয়ে উঠেছেন। মা দিবসে বরেণ্য এই অভিনেত্রীর মুখোমুখি হয়েছেন আমিনুল ইসলাম শান্ত।
রাইজিংবিডি: আজ বিশ্ব মা দিবস। দিবসটিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
দিলারা জামান: বাংলাদেশে আবার মা দিবস কী? পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু মা কিংবা বাবা দিবস বিদেশি সংস্কৃতি। এগুলো আমাদের দেশে এসে কিছু কার্ড আর ফুল বিক্রি বাড়িয়েছে। মা সারাজীবনই মা। বিশেষ একটা দিনে ভালোবাসার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। মা সন্তানকে, সন্তান মাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসবে। আমাদের সময়ে আমরা মা দিবস করিনি। তাই বলে মাকে আমরা ভালোবাসিনি?
রাইজিংবিডি: একটি অভিনয়, আরেকটি বাস্তব জীবন। দুই ক্ষেত্রেই আপনি সফল মা। বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে কী?
দিলারা জামান: পর্দায় মায়ের চরিত্র যখন রূপায়ণ করি, তখন যতটুকু বিশ্বাসযোগ্য করা যায় সেই চেষ্টা করি। মায়ের চরিত্র যখন করি, তখন সব সময় চেষ্টা থাকে পর্দা এবং বাস্তবের মায়ের যেন তফাৎ না হয়। দর্শক যখন চরিত্রটি পর্দায় দেখেন তখন যেন তার কাছে চরিত্রটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে জীবনে বড় একটা প্রাপ্তি ঘটেছে।
রাইজিংবিডি: প্রাপ্তির বিষয়ে যদি বিস্তারিত বলেন…
দিলারা জামান: নাটকে মা হতে হতে এখন সবার মা হয়ে গিয়েছি। শুটিং সেটে এখন যে আমাদের চা দেয়, সেই ছেলেটিও ‘মা’ ডাকে- দিলারা মা। যেমন: শর্মিলী মা, ডলি মা। আমরা এখন সবার মা। এই যে পাওয়া, এটা অনেক বড় বলে আমি মনে করি। যদি অভিনয় না করতাম, তাহলে সবাই আমাকে এভাবে ‘মা’ বলে ডাকতো না। আর মায়ের যে ভালোবাসা পাই এটাও পেতাম না। সেটে দেখা যায়, অন্যদের দুপুরের খাবার খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু সবাই আমাকে ঠিকই বলে, মা তুমি কিন্তু সময় মতো খেয়ে নেবে। তুমি এমনিতেই ডায়াবেটিসের পেশেন্ট। এই কেয়ারিং, ভালোবাসা এটা নাটকের জন্যই পাওয়া।

রাইজিংবিডি: মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কোনো স্মরণীয় ঘটনা মনে পড়ে?
দিলারা জামান: প্রতিটি মুহূর্তই তো স্মরণীয়! ১৯৬৪ সাল থেকে কাজ করছি। তার আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন ডাকসুর নাটক করতাম। তখনো মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। হিসাব করলে অনেক ঘটনাই আছে। সবই স্মরণীয় মনে হয়। ত্রিশ বছর আগে বিটিভিতে ‘এইসব দিনরাত্রি’ করেছিলাম। তখন বুলবুল আহমেদ, আসাদুজ্জামান নূর আমার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরে বুলবুল ভাই আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ঠাট্টা করে বলতাম, এখন আপনি আমার স্বামী হয়েছেন!
রাইজিংবিডি: বাস্তব জীবনেও আপনি একজন মা…
দিলারা জামান: হ্যাঁ, আমার দুটি মেয়ে আছে। ওরা দেশের বাইরে থাকে। ওদের ভালোবাসা নিয়েই এখন বেঁচে থাকা। ওদের ভালোবাসা না পেলে হয়তো আমার এখানে থাকাই মুশকিল হয়ে যেত। আমি মনে করি, আমার দেশও আমার মা। কারণ আমি মেয়েদের কাছে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু থাকতে পারিনি। আমার যাপিত জীবন, চারপাশের জীবন সবকিছু ওখানে গিয়ে মিস করতাম। এসব নিয়ে ওখানে কষ্ট পেতে পেতে আবার দেশে ফিরে আসি। ওরাও আমাকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় থাকে। প্রতিদিন ফোনে ওদের সঙ্গে কথা হয়। তারপরও আমার দেশ, আমার মাকে ছেড়ে কোথায় পালাবো! দেশ মায়ের জন্য এতো লক্ষ প্রাণ শহীদ হয়েছে। সম্ভ্রম দিয়েছে নারীরা। সেই দেশ ছেড়ে আরেক দেশে থাকতে পারিনি। আমি চাই, দেশের মাটিতেই আমার শেষ বিদায় হোক। সবার কাছে এই দোয়া চাই।
রাইজিংবিডি: আপনার ক্যারিয়ারে আপনার মায়ের কতটা অবদান ছিল?
দিলারা জামান: আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। খুব রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন যখন নানাবাড়ি যেতাম তখনো বোরকা পরে যেতে হয়েছে। আমার মা এমন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হয়েও খুব সংস্কৃতিমনা ছিলেন। যার জন্য আমার পড়াশোনা, অভিনয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। ড. নূরুল মোমেন স্যার আমার নাট্যগুরু। তিনি ১৯৬২ সালে ইডেন কলেজে পড়াকালীন নাটকে অভিনয়ের জন্য নিলেন। সেই নাটকে অভিনয় করে প্রথম হয়েছিলাম। এতে মা খুব খুশি হয়েছিলেন। ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে নাটক করা যাবে না- এ রকম বাধা মা কখনো দেননি। বাবা-মা দুজনেই খুব উদার ছিলেন। না হলে আমি আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। আমার স্বামী ফখরুজ্জামান চৌধুরী বিশিষ্ট অনুবাদক। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিও যথেষ্ট সংস্কৃতিমনা। যে কারণে কাজ করতে পেরেছি। এমন জায়গায় শুটিং করতে গিয়েছি, ফিরতে ফিরতে ফজরের আজান দিয়েছে। বাসায় ফিরে দরজায় নক করেছি। দেখি তিনি খাবার টেবিলে বসে বই পড়ছেন। এ ভাবে তিনি আমার পাশে থেকেছেন। সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই হয়তো এতো দূর আসতে পেরেছি।
ঢাকা/তারা
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2xSaKvq
via IFTTT
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন