‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি পাবলিকের চেয়ে পিছিয়ে নেই’ - পূর্বকন্ঠ

শিরোনাম :

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি পাবলিকের চেয়ে পিছিয়ে নেই’


ডা. মো. রুকনুজ্জামান। পেশায় একজন ভেটেরিনারিয়ান (পশু চিকিৎসক)। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি একজন প্রাণী পুষ্টিবিদ। সম্প্রতি দেশের করোনা পরিস্থিতি, ভেটেরিনারি পেশা, করোনা মোকাবিলায় ভেটদের ভূমিকা এবং নিজের ব্যক্তিগত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকমের সাথে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার লিখে পাঠিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বরাতুজ্জামান স্পন্দন।

কেমন আছেন?
ডা. রুকনুজ্জামান: ভালো আছি।
আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
ডা. রুকনুজ্জামান: আমি ডা. মো. রুকনুজ্জামান, পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার যাদববাটি গ্রামে আমার বাড়ি। আমাদের এলাকার তোড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করি। এরপর দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ২য় হয়ে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অনুষদের অ্যানিমেল সায়েন্স ও নিউট্রিশন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ১ম হয়ে অ্যানিমেল নিউট্রিশন বিষয়ে এমএস সম্পন্ন করি।

এত বিষয় থাকতে ভেটেরিনারিকে কেন বেছে নিলেন?
ডা. রুকনুজ্জামান: সত্যি বলতে ভেটেরিনারি পেশার প্রতি আগে থেকেই একটা ভালো লাগা কাজ করতো। যখন অনেক ছোট ছিলাম, তেমন কিছু বুঝতাম না। আমাদের বাড়ির বা পাশের বাড়ির প্রাণী অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি ডাক্তার এসে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলতো আর সবাই ডাক্তারকে অনেক সম্মান করতো। সত্যি বলতে অবলা প্রাণীদের কষ্ট লাঘব করার মধ্যে আলাদা এক প্রশান্তি আছে, তাই এই পেশায় আসা। আমার এক মামা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিভিএমে পড়তেন। আমি তখনও স্কুলে পড়তাম। তার কাছ থেকেই প্রথমে এই ডিগ্রি সম্বন্ধে জানা। আমি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিষয়ে পড়ার সু্যোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু ভেটেরিনারি পেশার প্রতি ভালোবাসা ও ক্যারিয়ারের কথা ভেবেই এই বিষয়ে ভর্তি হই।

পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে কেন পছন্দ করলেন?
ডা. রুকনুজ্জামান: সত্যি বলতে শিক্ষকতা আমার প্যাশন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিভিএমের ছাত্র থাকা অবস্থায় যেহেতু প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম, তাই শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোনো পেশাকে নিয়ে আসলে ভাবায় হয়নি। এটা আমার ভালো লাগার একটা জায়গা। শিক্ষকতা বিষয়টাকে অনেক উপভোগ করি আমি। ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে যেকোনো পেশাতেই প্রাণী সেবা ও দেশের কল্যাণে অবদান রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমার কাছে শিক্ষকতা পেশাটা একটা আলাদা সম্মান আর শ্রদ্ধার। তাই অন্য জায়গায় আরো ভালো সুযোগ-সুবিধার চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই পেশাটাকেই আমি বেছে নিয়েছি।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অবসরে কী করছেন?
ডা. রুকনুজ্জামান: বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকাতে ক্যাম্পাস যাওয়া হয় না। অন্য সবার মতো আমিও ক্যাম্পাসের কোলাহল, শিক্ষার্থী, ক্লাস নেওয়া এগুলোকে মিস করছি। বন্ধের মধ্যে বাড়ির ভেতরেই আছি। জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া হয় না। যেহেতু রমজান মাস রোজা রাখি, নামাজ পড়ি।  এছাড়া অনলাইনে ক্লাস চালু থাকায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হয়। পাশাপাশি অবসর সময়গুলোতে জার্নালে পাবলিশ করার জন্য কিছু রিসার্চ আর্টিকেল লিখতেছি। পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কয়েকদিন আগে কিছু গরীব মানুষকে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ফোনের মাধ্যমে প্রাণি চিকিৎসা ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে৷ সব মিলিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি আর ছুটির সময়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।

শিক্ষকতার পাশাপাশি পেশা সংশ্লিষ্ট বা এর বাইরে পূর্বে কি কি কাজ করেছেন বা এখনো করছেন?
ডা. রুকনুজ্জামান: ছাত্র থাকাকালীন পড়াশুনার পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ সোসাইটি ফর লাইভস্টক ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ (BSLWR) ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (BVSF) এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রি প্রাণি চিকিৎসা, ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পেইন, প্রাণীদের শীতবস্ত্র বিতরণের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি যেহেতু প্রাণী পুষ্টিবিদ, শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি ফিড মিলে নিউট্রিশনাল কন্সাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করি। রেশন ফরমুলেশন, খাদ্যের গুণগত মান নির্ধারণসহ প্রাণী খাদ্যের পুষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমি বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন সোসাইটির (BANS) একজন সদস্য। তাছাড়া, প্রাণীর পুষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণায় সম্পৃক্ত রয়েছি।


করোনা মোকাবিলায় ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা কী?
ডা. রুকনুজ্জামান: বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেটেরিনারিয়ানরা সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে। গোটা বিশ্ব এখন ওয়ান হেলথ কন্সেপ্ট নিয়ে এগোচ্ছে। যেখানে পরিবেশ-প্রাণী-মানুষ একই সুতোয় গাথা। করোনা আবারো সেটা মনে করিয়ে দিলো। কারণ, এটা বন্যপ্রাণী থেকে এসেছে (বলা হয়)। তাই, এই ধরনের রোগ মোকাবিলা করতে হলে ভেটেরিনারিয়ানরাই পারে প্রাণীর সংক্রামক রোগগুলো শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নির্মূলে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে৷ ভেটেরিনারিয়ান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল স্যার তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তাছাড়া নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ নিশ্চিত করে জনগণের পুষ্টির চাহিদা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভেটেরিনারিয়ানরা সবসময় সচেষ্ট আছেন।

বর্তমানে আলোচিত করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবক টিমের প্রধান ড. বিজন কুমার শীল আপনার প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান। যদি তার সম্পর্কে কিছু বলেন।
ডা. রুকনুজ্জামান: ড. বিজন কুমার শীল স্যার একজন দক্ষ, কর্মঠ সজ্জন ভেটেরিনারিয়ান বিজ্ঞানী। স্যারের সহকর্মী হতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। তিনি আমাদের গর্ব ও অনুপ্রেরণা। গোটা ভেটেরিনারি পরিবার স্যারকে নিয়ে গর্বিত। তিনি এর আগেও বেশ কয়েকটি সফল উদ্ভাবন করেছিলেন।

তার বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা, চেতনা আমাদের দেশের জন্য আরো ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা দেয়। সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ স্যারের উদ্ভাবিত করোনা শনাক্তের কিট মূল্যায়ন পূর্বক অনুমোদন দিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা যাতে বাড়ানো হয়। যেটা এই মুহূর্তে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম হাতিয়ার।

এদেশে একজন পুষ্টিবিদের গুরুত্ব কতটুকু এবং সে অনুযায়ী আসলেই কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
ডা. রুকনুজ্জামান:  সুস্থ সবল থাকতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিরাপদ প্রাণীজ আমিষের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। নিরাপদ প্রাণীজ আমিষের জন্য প্রয়োজন প্রাণীকে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ করা। আর এজন্য প্রয়োজন একজন প্রাণী পুষ্টিবিদ। যিনি একটি প্রাণীর বিভিন্ন বয়স ও উৎপাদনের পর্যায় অনু্যায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকেন। বিশ্বে একজন প্রাণী পুষ্টিবিদের চাহিদা অনেক। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এজন্য শুধু তত্ত্বীয় জ্ঞান নয়, মাঠ পর্যায়ে দক্ষ পুষ্টিবিদ হওয়া জরুরি।


গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
ডা. রুকনুজ্জামান: গণ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদ রয়েছে। ভেটেরিনারি শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব সু্যোগ-সুবিধা ও উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষক মন্ডলী থাকায় ইউজিসি একমাত্র গণ বিশ্ববিদ্যালয়কেই এই অনুষদ খোলার অনুমতি দিয়েছে। এখানকার ক্যাম্পাস শিক্ষার পরিবেশ, ল্যাব ফেসিলিটিস সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে কোনো অংশেই কম নয়। যুগোপযোগী দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরিতে অনুষদটি বদ্ধপরিকর।



কোন মন্তব্য নেই: