
আইএমএফের ৭০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড়ে চিঠি দিচ্ছে সরকার
বিশেষ প্রতিবেদকআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি খাত থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড়ের জন্য চিঠি দেবে বাংলাদেশ।
গত এপ্রিল মাসে সংস্থাটির কাছে উল্লেখিত পরিমাণ ঋণ বরাদ্দ চাওয়া হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণে এ অর্থ ব্যয় হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে দাতা সংস্থাটির কাছে চলতি সপ্তাহেই চিঠি দেবেন বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চলমান করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের অপ্রত্যাশিত ব্যয় বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৫ শতাংশ। কিন্তু এ ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। সাময়িকভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থ নিয়ে করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সব প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এভাবে বেশি দিন চলা যাবে না। তাই উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ ও অনুদানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এর আলোকেই আইএমএফের কাছে সহজ শর্তে ৭০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হবে। সেই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ অর্থ ছাড়েরও অনুরোধ করা হবে চিঠিতে।’
সূত্র জানায়, চিঠিতে দেশের বর্তমান অর্থনীতির একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হবে। এর আগে গত এপ্রিলে আইএমএফের কাছে এই পরিমাণ অর্থ চেয়ে আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে আইএমএফ নানা শর্ত জুড়ে দিলেও এ ঋণের জন্য তেমন কোনো শর্ত দেয় না। তবে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রেখে দারিদ্র্য বিমোচনের দিকে বেশি নজর দিতে বলা হয়।
র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির আওতায় পাওয়া ঋণের সুদ হার শূন্য শতাংশ। এ ঋণে কোনো সুদ আরোপ করা হয় না। সাড়ে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে ১০ বছর। দীর্ঘমেয়াদী এ ঋণের অর্থ যেকোনো দেশ তার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারে। তবে আবেদন দেশভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিবেচনা করা হয়। এ ঋণের ক্ষেত্রে দেখা হয় সংশ্লিষ্ট দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি রয়েছে কি না, দেশটির সার্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্র কী এবং দেশটি ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য রাখে কি না।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফ করোনাভাইরাসে সদস্য দেশগুলোর আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিল তৈরি করেছে। আরসিএফের আওতায় গঠিত এ তহবিল থেকে সদস্য দেশগুলোকে কম সুদে এবং সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এ তহবিল থেকে ৭০ কোটি ডলার চেয়েছে। ঋণটি দ্রুত ছাড়ের প্রয়োজন তাই অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এটি দ্রুত ছাড় করার জন্য চলতি সপ্তাহেই চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এ চিঠির খুঁটিনাটি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার বিশদ বিবরণ থাকছে।এতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়টি উল্লেখ করে আইএমএফকে বলা হবে, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে এক ধরনের চাপ অনুভূত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ চাপ আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।’
জানা গেছে, চলতি বছরের জন্য আইএমএফের কাছে বাংলাদেশের ঋণের কোটা রয়েছে প্রায় ১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনুযায়ী আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ১২০ কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে। কারণ কোনো দেশকে আইএমএফের ঋণ পেতে হলে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সে সক্ষমতা অর্জন করেছে এ কারণে ৭০ কোটি ডলার ঋণ আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পেতে পারে।
আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০১২ সালে ৯৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল। এর মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হয়েছে। এরপর থেকে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ঋণ চুক্তি নেই। তারা বাংলাদেশকে ঋণ দিতে নানা প্রস্তাব দিলেও সরকার তা নেয়নি। কারণ সে সময়ে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি ছিল না।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/3dx6dh6
via IFTTT
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন