ইটভাটার আগুনে পুড়েছে কৃষকের স্বপ্ন - পূর্বকন্ঠ

শিরোনাম :

রবিবার, ১০ মে, ২০২০

ইটভাটার আগুনে পুড়েছে কৃষকের স্বপ্ন



ইটভাটার আগুনে পুড়েছে কৃষকের স্বপ্ন

ধামরাইয়ে ইটভাটার আগুনে কয়েকটি গ্রামে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  করোনার এই দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায় চিন্তিত কৃষক।
উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া, মারাপাড়া, চারিপাড়া, অর্জুন নালাই গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের ইটভাটার আগুনে অন্তত ৩০ একর জমির ধান পুড়ে গেছে। কোথাও কোথাও কাঁচা ধান পুড়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো জমির ধানের ছড়া পুড়ে গেছে। আছে শুধু খড়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া-কাওয়াখোলা-মারাপাড়া-অর্জুন নালাইসহ কয়েকটি গ্রামে এবার ধানের ভালো আবাদ হয়। এসব গ্রামের আশপাশে ৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ফসলের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া, ফসলি জমির মাটি কেটে এসব ভাটায় নেওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, এবার ইট পোড়ানো মৌসুম শেষে গত সপ্তাহে কয়েকটি ভাটায় চিমনির আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ভাটা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চিমনির প্রচণ্ড গরম বাতাসে আশপাশের ওই তিনটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত একর জমির ধানের ক্ষতি হয়।
তারা কৃষিজমিতে এসব ভাটা উচ্ছেদ ও ইটভাটার আগুনে তাদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কাওয়াখোলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই ভাটার আগুনে আমার ৯৬ শতাংশ জমির ধান বিবর্ণ হয়েছে।’

গাংগুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের কৃষক মো. জলিল বলেন, ‘আমি এনজিও থেকে টাকা তুলে ৫০শতাংশ জমি চুক্তি নিয়ে ধান চাষ করেছি। ওই জমির পাশে মামুন ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও গরম গ্যাসে আমার জমিসহ আর প্রায় ৮ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আরও ১০ বিঘা  ধানক্ষেত নষ্ট হতে পারে।
 


এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগে আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
কৃষক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘গত সপ্তাহে হঠাৎ করে মামুন ব্রিকস ইটভাটার আগুন নেভানো হয়। এর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে আমার ধান ক্ষেতসহ প্রায় ৮ একর জমির ধান ঝলছে গেছে। এরপর আস্তে আস্তে সেটা খড়ে পরিণত হয়। ফলে ওই জমি থেকে কোনো ধান পাওয়া যাবে না। এনজিও কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অন্যের জমি চুক্তিতে ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু ক্ষেত পুড়ে যাওয়ায় এখন ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আর আমার পরিবারের মোট পাঁচজন সদস্য। এই করোনাকালে আমরা কী খেয়ে বাঁচব।’
আরেক কৃষক মো. সাইজুদ্দিন বলেন, ‘আমি ৫০ শতাংশ জায়গায় ধান চাষ করেছি। ধান চাষ করতে সার, বিষ, পানি খরচ, কামলা বাবদ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার ক্ষেতে ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু মামুন ব্রিকস আমার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। তাই আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে এর ক্ষতিপূরণ চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ধান নয়, আপনারা দেখেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যে পাশ দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে ধান নষ্ট করেছে সেই দুই পাশের বড় কয়েকটি গাছও নষ্ট হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে সুরমা ব্রিকসের মালিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষকেরা যে অভিযোগ করছেন, আসলে তাদের এতটা ক্ষতি হয়নি। তবু যা ক্ষতি হয়েছে, তা অনিচ্ছাকৃত। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এ বিষয়ে মামুন ব্রিকস ইটভাটার মালিক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ইটভাটার আগুনে কৃষকের ধান পুড়ে গেছে সেজন্য কৃষি অফিসার এসেছিল। আমি কৃষি অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।’
ধামরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবেদন পেলেই কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে তা আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।’

সাভার/সাব্বির/ইভা


from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2Lg8qBn
via IFTTT

কোন মন্তব্য নেই: