বিলুপ্তির পথে যে পেশা! - পূর্বকন্ঠ

শিরোনাম :

বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০

বিলুপ্তির পথে যে পেশা!

সামসুল ইসলাম সনেটঃ আজ থেকে পনেরো বিশ বছর আগেও প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়তো একটি দৃশ্য, কানে বাজতো তাদের ডুগডুগির আওয়াজ। হারানো স্বর্ণ-রুপা খুঁজি, তাবিজ কড়ি বিক্রি করিসহ নানা হাক ডাকে দেখা যেতো দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে। দেশের নদ-নদী,পুকুর-জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের সাথে কমেছে এর ব্যবহারও। মাছ ধরা থেকে দৌত করা, ওযু-গোসল করা, জামাকাপড়, থালাবাসন মাজাসহ প্রতিটি কাজই ছিলো নদী বা পুকুর কেন্দ্রিক।

 তাই নদী বা পুকুরে গিয়ে খোয়া যেতো স্বর্ণ রুপাসহ নানা দামী জিনিসপত্র। আর তখনই ডাকত পড়তো তাদের, তারা হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়ের  স্বর্ণ খোজার কারিগরি। ত্রিভুজ আকৃতির টিনের চিদ্রছিদ্রএকটা ঠেলা বা টানা একপাশে অন্যপাশে তাবিজ-কড়াসহ নানা প্রসাদনী নিয়ে গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াত তারা। কিন্তু নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পেশাটিও। তবে বাপ-দাদার পেশাটি টিকিয়ে রাখছে আজও গাওয়ালে বেড় হন তাদের কেউ কেউ। যেখানে প্রায় প্রতিদিনই ইনকাম ছিলো ৫শ হাজার টাকা সেখানে এখন মাসেও জুটেনা চার-পাঁচটা কাজ।

এনিয়ে কথা হয় কেরানীগঞ্জ উপজেলার বাস্তা ইউনিয়নের ঢাকা-মাওয়া রোডের পুরাতন রাস্তায় টং পেতে বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়ের যুবক সোহাগের সাথে। তিনি জানান, এই কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ না জানায় এখনো ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশা। তাদের সংসারের নারীরা কাজে বেড় হলে তারাও বেড়িয়ে পড়েন কাজে। উদ্যেশ্য পরিবারে কিছুটা অবদান রাখা। তিনি আরও জানান আগে নদী বা পুকুর ঘাট বেশি ছিলো তাই কাজও বেশি ছিল। এখন পানি কমার সাথে আমদের রুজিরোজগারও কমেছে। আগে প্রতিদিন ৫০০/৭০০ কখনো কখনো হাজার টাকার বেশি ইনকাম ছিলো। এখন নদীর পাশের গ্রামগুলোতে ঘুরেফিরে মাসে চার-পাঁচটা কাজ পাই। তাই দিয়ে পরিবারকে কিছুটা সাহায্য করি।

সাধারণত এই সম্প্রদায়ের নারীরা ঝাড়া ফোক , দাঁতের পোকা ফেলা, রসবাতের তেল বেচা এবং শিঙা ফুঁকা, সাপের খেলা দেখা ইত্যাদি কাজ করে।  আর পুরুষ বেদেরা  সাপের তাবিজ কবজ ও ওষুধ বিক্রয় করে, সাপের খেলা দেখার বাহিরে গিয়ে ফেরি করে তাবিজ-কবচ বিক্রি করে পাশাপাশি স্বর্ণ রুপার অলংকার খোঁজার কাজ করে। বিক্রমপুর, ঢাকা, সুনামগঞ্জ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে এদের আদি বসবাস। এরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাদের নিজস্ব ভাষা আছে। এই ভাষার নাম ঠেট বা ঠের। স্বগোত্রীয়দের সাথে কথা বলার সময় এরা এই ভাষা ব্যবহার করে থাকে।

এই গোত্রের বেদেরা সহজ-সরল জীবনযাপন করে। এরা খুবই সৎ প্রকৃতির। অপরাধ করে গুরুতর শাস্তির ভয় থাকলেও সর্দারের কাছে তারা অপরাধ স্বীকার করে। এদের জীবন ধারণের মান অত্যন্ত নিম্ন ও অপরিচ্ছন্ন। মুসলিমদের সাথে এদের সামাজিক সম্পর্ক খুব কম। মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা হিন্দু দেবদেবীর প্রশস্তি রচনা ও গুণকীর্তন করে। কালের বিবর্তনে দেশে হারিয়ে যাচ্ছে নানা পেশা। তার মাঝে এটাও অন্যতম।

কোন মন্তব্য নেই: