তপু সরকারঃ শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ১১নভেম্বর ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে । ৩ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা বিনা প্রতিদন্ধিতায় ঘোষনা হলেও ১১টি ইউনিয়নে জোরালো প্রতিদন্ধিতায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। আর একটিতে রয়েছে শরিক দল জাতীয় পার্টি ।
৮নং লছমন পুরের ইলশা গ্রামের সাগাত আলী মিয়া পূর্বকন্ঠকে জানান ,স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গুলি সাধারণত বেশীর ভাগ মেম্বার নির্বাচিত হয় গোত্র বা গোষ্ঠিগত কারণে। আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় আঞ্চলিকতার জোরে ।
এখনো দেখা যায় , নদীর এপার এবং ঐপার এবং চর আর বীর দুই পাশে দুই জন প্রার্থী হলেও, সে যে দলেরই হোক সেটি আঞ্চলিকতার প্রভাব পড়ে । এ আধুনিক যুগে এখনও বেশীর ভাগ স্থানীয় নির্বাচন গুলি রাজনৈতিক পৃষ্ট-পোষকতায় চলে গেলেও আঞ্চলিকতার ঘাটতি কমেনি ।
৯নং চরমোচারিয়া ইউনিয়নে মোঃ আঃ হান্নান (৭০) তিনি বলেন , প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায় ৫ বছরে প্রায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজ হয় এবং সেটা বেশীরভাগ বাস্তবায়িত হয় চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে । যার ফলে যখন যে সরকার থাকে সে সরকারের প্রতিনিধিই হোন বেশীরভাগ চেয়ারম্যান । অভিজ্ঞ মহল মনে করেন প্রতিনিধি যেই হোক.নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিলেও ভোটের মেকানিজম চলে যায় রাজনৈতিক মাফিয়াদের কবলে । যার ফলে অনেক অযোগ্য লোক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যায়।
জেলা শহরের প্রবীন আওয়ামী সমর্থক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার দীর্ঘ ১৩ বছরেও এক হতে পারেনি শেরপুরের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলি । ফলে এখানকার স্থানীয় নির্বাচন গুলিতে নেতা-কর্মীরা দ্বিমুখী, ত্রিমুখী এবং চতুর মুখী সংকট বিরাজমান।
স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের সাথে নব্য আওয়ামী লীগের চতুরগামী পদচারনা চাটুকারিতা এবং যারা এক সময় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের অত্যাচার জেল জুলুমে হয়রানী করে বাড়ী ঘরে থাকতে দেয়নি তারাই এখন নেতাদের চারপাশে সারিবদ্ধ হয়ে বসে থাকায় অনেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাজ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিমত ।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বহুমুখী সংকট-সংঘাত সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলি দূর্বল করছে। নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব এখনই বন্ধ না হলে আসছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ । আবার দুই দিকেই তাল মিলিয়ে সুবিধা গ্রহনে ব্যস্থ জামাত, বি এন পি ও জাতীয় পার্টি ।
সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১নং কামারেরচর, ৬নংপাকুরিয়া এবং ৪নং গাজির খামার ইউনিয়নে বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হলেও বাকী ১১ টি ইউনিয়নে রয়েছে প্রভাবশালী শক্তিশালী প্রতিপক্ষ । এরা বেশীর ভাগই সরকারী দলের কেউ আবার শরিক দলের ।
উক্ত ১৪টি ইউনিয়নে ২লক্ষ্য ৯০ নব্বই হাজার ৭১৫ ভোট । বিনা প্রতিদন্ধিতায় ৩টি ইউনিয়নের মধ্য ৬নং পাকুরিয়া ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশী ভোট ২৮ হাজার ৩৯০,১নং-কামারেরচরে ১৮ হাজার আটশত ৯৩ তিরা নব্বই ও ৪নং গাজির খামার ইউপিতে ১৬ হাজার ছয়শত ৭ ভোট ।
১২নং কামারিয়া ইউনিয়নে ভোটের সংখ্যা ২য় স্থানে ২৬৮৮৩ ভোট। সেখানে নৌকার প্রার্থী সারোয়ার জাহান কে দেয়া হলেও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আওয়ামী সমর্থক সতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী । যিনি প্রায় ১৫টি মামলায় জামিন প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করলে ও কৌশলগত কারনে বাতিল হয়ে যায় । পক্ষান্তরে আফিল করলেও সুযোগ পায়নি নুরে আলম সিদ্দিকী ।
পরে মহামান্য হাইকোর্টে আফিল করলে আইনী জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে আনারস মার্কা প্রতিক নিয়ে নৌকার সাথে হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ে মাঠে সক্রিয়। ৭নং-ভাতশালায় ইউনিয়নে ২৩.৭৫৮ ভোট , এখানে নৌকার বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার এবং প্রতিদন্ধি আওয়ামী সমর্থক সতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন । ৩নং বাজিতখিলা ইউনিয়নে ১৭.১৫৬ ভোট, নৌকার মোঃ মোহাম্মদ আলী প্রার্থী তার প্রতিদন্ধি আওয়ামী সমর্থক সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খুররুম হোসেন । ৮নং লছমনপুর ইউনিয়নে ২৩.৮২১ ভোট , নৌকার প্রার্থী আঃ হাই হলেও সেখানে রয়েছে ত্রিমুখী লড়াই। বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া ও আবুল কালাম আজাদ ।
৯নং চরমোচারিয়া ইউনিয়নে ২২.৬৭৮ ভোট, নৌকার মিজানুর রহমান বাবুল তালুকদারকে দেয়া হলেও সেখানে রয়েছে শক্তিশালী প্রতিদন্ধি শেরপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ সাব্বির হোসেন খোকন । ১৪নং চরপক্ষিমারী ইউনিয়নে ২০৫৮৬ ভোট । নৌকার মোঃ আকবর আলী হলেও সেখানে সরকারের শরিক দলের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মোঃ আঃ রউফ এর সাথে জোড়ালো লড়াই হবে বলে জানান এলাকাবাসী ।
১৩নং বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নে ১৬.৫৭৬ ভোট সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আঃ মজিদ মজু , সেখানে শক্তিশালী প্রার্থী সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান কারী মিডিয়ায় আলোড়ন কারী সাবেক জাতীয় পার্টি সমর্থক ও বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নে বিএনপি সাবেক সভাপতি মোঃ দুলাল মিয়া । তার জন্য এলাকার সাধারন মানুষ নির্বাচনের প্রায় ৩ হাজার বস্তার মুড়ি উপহার দিয়ে দুলালকে সমর্থন করেমিছিল করে ।
১১নং বলাইয়েরচর ইউনিয়নে ২৪৮৬৩ ভোট, মোঃ মনিরুল আলম মনিকে নৌকার প্রার্থী করলেও সেখানে রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী ও ত্রিমুখী লড়াই। বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী, সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম মিয়া ও মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন নামে শেরপুর সাব-রেজিষ্টার অফিসের সরকার তারা তিন জনই কোন না কোনো ভাবে সরকার দলীয় সমর্থক বলে দাবী করেন।
এখানে ত্রিমুথী লড়াই হবে বলে জানান এলাকাবাসী । ২নং চরশেরপুর ইউনিয়নে ২৫৬০৫ ভোট , নৌকার মোঃ রফিকুল ইসলাম মিলটন হলেও শক্ত প্রতিদন্ধি সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সেলিম রেজা ,তিনি বর্তমানে আওয়ামী সমর্থক হলেও পুরো পরিবারই বি এনপি সমর্থক বলে দাবি এলাকাবাসীর । ১২নং রৌহা ইউনিয়নে ১০৮৮২ ভোট নৌকার প্রার্থী মো. সাইফুজ্জামান সোহেল । পক্ষান্তরে সেখানে বর্তমান প্রভাবশালী চেয়ারম্যান আওয়ামী সমর্থক মোঃ শফিকুল ইসলাম মিজু সতন্ত্র প্রার্থী । ৫নং ধলা ইউনিয়নে ১৪০৬৭ ভোট, নৌকার মোঃ রহিজ উদ্দিন এবং সেখানেও আওয়ামী সমর্থক সতন্ত্র প্রতিদন্ধি মোঃ জাকির হোসেন ।
‘এ দিকে উপজেলা নির্বাচন কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শেরপুর ১৪ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ১১নভেম্বর ভোট গ্রহন এবং শেরপুরের জেলা প্রশাসন জেলা পুলিশ প্রশাসন ও জেলার উচ্চ পদস্থ যারা, সবাই অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন