ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের (এমপি) তিন বছরের সাজা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১০ মে) দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের সাজা থেকে হাজী সেলিমকে হাইকোর্ট খালাস দিয়েছিলেন। ওই খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে দেওয়া বিচারিক আদালতের ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়েছে। গত বছর এ রায় দেন হাইকোর্ট। দুদকের আইনজীবী আরও বলেন, উচ্চ আদালত আত্মসমর্পণ করতে বলার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তা পালন করেননি হাজী সেলিম। তার উচিৎ ছিল দ্রুত আত্মসমর্পণ করা।
২০২১ সালের ৯ মার্চ হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই দিন আদালতে হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার, আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। অপরদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির।
রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় হাজী সেলিমকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুদক এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশের রায় দেন আদালত। এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৬ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের রায় এবং আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ঢাকার স্পেশাল জজ আদালত-৭ এ হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তিনি আত্মসমর্পণ করতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। তবে হাজী সেলিমের আইনজীবী আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা জানিয়েছিলেন, হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বিচারিক আদালতে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হবে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুটি অপরাধের দায়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
এর মধ্যে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর এবং সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় তিন বছর দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে হাজী সেলিমের সাজা বাতিল করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। `ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।,
এরপর গত বছরের ৯ মার্চ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ১০ বছরের দণ্ড বহাল এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন