ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর’। বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি গত ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা এখন চালুর অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল জাদুঘরটি ট্রায়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে।,
কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠার ইতিহাস।,
জাদুঘরে আরও রয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ননীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস। আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে, দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অজনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থা। কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।,
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ। সেখানে প্রায় একশ বই রয়েছে। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। যা বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে দর্শনার্থীদের। দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিষপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ, তার হাতে লেখা চিঠি। জাদুঘরটি রয়েছে একটি ডিসপ্লে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।,
আর এর পেছনে বেজে চলে ‘তুমি ইতিহাস জুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক এই বাংলার তুমি শোষকের যম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার।’ রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা গানটি জাদুঘরে থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিত্র। গত ২৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। এখন আসছে ১ আগস্ট থেকে সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।,
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই উদ্যোগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতির পিতার কাছে পুরো বাঙালি জাতির ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না। মুজিব শতবর্ষে আমাদের এমন একটি উদ্যোগ যা বঙ্গবন্ধুকে মুজিববর্ষের পরেও স্মরণীয় করে রাখবে। সাধারণত মানুষ জাদুঘরের কাছে যায় কিন্তু আমাদের ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর মানুষের কাছে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য কর্মজীবন তুলে ধরবে।,
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ মানুষকে টার্গেট করেছি যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্টেশনে রেখে গ্রামীন মানুষের কাছে তার জীবন তুলে ধরা যায়। এটির মূল ভাবনা পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে আমি ছিলাম। নির্মান খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। ভিতর বাহির থেকে নানামুখী বাধা ছিল। তার ওপর করোনাভাইরাসের কারণে কাজ আরও কঠিন ও বিলম্বিত হয়। তা ছাড়া এই কাজের পুর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। অনেক ট্রায়াল করতে হয়েছে। একটি মাত্র কোচে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। সকলের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।,
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিটার গেজ শুরু হবে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আর ব্রডগেজ শুরু হবে গোপালগঞ্জ স্টেশন থেকে। জাদুঘর দুইটি পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, ভাটিয়ারী, সীতাকুন্ড, চিনকিআস্তানা, ফেনী জংশন, গুণবতী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম জংশন, চৌমুহুনী, মাইজদীকোর্ট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, আখাউড়া, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, ভৈরববাজার, নরসিংদী, টঙ্গী জংশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা, ফতুল্লা, চাষাড়া, নারায়নগঞ্জ। আর পশ্চিমাঞ্চলে যাবে গোপালগঞ্জ, কাসিয়ানি, ভাটিয়াপাড়া ঘাট, মধুখালী জং, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাংশা, কুমারখালী, কালুখালী জং এবং কুষ্টিয়া। প্রতিটি স্টেশনে দুই থেকে তিনদিন ধরে জাদুঘরটি অবস্থান করবে। ওই স্টেশনে জাদুঘর পৌঁছানোর আগে প্রচারণা চালাবে রেলওয়ে, যাতে মানুষ জানতে পারে এবং জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই জাদুঘর সকলে ঘুরে দেখতে পারবেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে শুধু রেলখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিংবা রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষই নয় এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আরও নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ পাবেন।,
from Sarabangla https://ift.tt/LRIvUc8
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন