ঢাকা: সাংবাদিক-লেখক-গবেষক ও নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন গুণী এই মানুষটি।
১৯৪৮ সালের ২৩ জুন কলকাতায় বেবী মওদুদের জন্ম। তার বাবা বিচারপতি আবদুল মওদুদ ছিলেন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড এবং নজরুল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।,মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ। ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আসাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অসীম সাহসে। যুক্ত ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনেও। ১৯৭১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে স্বাধীনতার স্বপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন তিনি।
১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক এবং চিত্রালীর মাধ্যমে হাতেখড়ি হলেও শিক্ষাজীবনের দিকে ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন বেবী মওদুদ। ৪ দশকের বেশি সময়ের সাংবাদিকতায় তিনি সাপ্তাহিক ললনা, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক আজাদ, গণবাংলা, বিবিসি বাংলা বিভাগ, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বাংলা বিভাগে কাজ করেছেন।,
নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়, অগ্রসৈনিক।,
১৯৯৬ সালে বাসসের বাংলা বিভাগ তার নেতৃত্বে চালু হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সামাজিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনায় যেমন নাম কুড়িয়েছেন, তেমনি সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে অথবা নারী নেত্রী ও সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।,
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার পরিবার, মনে মনে (ছোট গল্প), শেখ মুজিবের ছেলেবেলা (শিশু সাহিত্য), দুঃখ-কষ্ট-ভালোবাসা (উপন্যাস) গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা, দীপ্তর জন্য ভালোবাসা, আমার রোকেয়া, রোকেয়া পাঠ, টুনুর হারিয়ে যাওয়া, শান্তুর আনন্দ, এক যে ছিলো আনু, মুক্তিযোদ্ধা মানিক, কিশোর সাহিত্য সমগ্র, নিবন্ধ সমগ্র-অন্তরে বাহিরে, পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী পাঁচার এবং পুটুর জন্য ছড়া ও কবিতা।,
দৈনিক বাংলা-টাইমস- সরকারি ট্রাস্ট থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে বিচিত্রা নতুন কলেবরে শেখ রেহানার সম্পাদনায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে প্রকাশিত হতো। সেই বিচিত্রার মূল কর্ণধার ছিলেন বেবী মওদুদ। ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থসহ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সহপাঠী, বন্ধু-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গবেষণা ও সংকলন করেছেন তিনি। ১৯৪৭ থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও তৎকালীন গোয়েন্দা তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের গবেষণা ও সংকলনে দায়িত্ব পালন করেছেন বেবী মওদুদ।,
তথ্য অধিদফতরে গবেষণা সহকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ নারী সাংবাদিক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে ভ্রমণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফিলিপিন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, মানবতার আন্দোলনে হল্যান্ড এবং সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণ করেছেন।,
বনানী কবরস্থানে পরিবারের সদস্যরা বেবী মওদুদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন