চবি প্রতিনিধি : গত মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রশাসনপন্থি প্রার্থীদের ভরাডুবির রেশ চলতি মাসের সিন্ডিকেট নির্বাচনেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি চবি প্রশাসন। এছাড়া চারুকলার আন্দোলন, নিয়োগ কেলেঙ্কারিসহ বেশ কিছু কারণে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে চবি প্রশাসন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রক্টরসহ বিভিন্ন পর্ষদের ১৮ পদ থেকে ১৬ শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রোববার দুপুরে নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) বরাবর একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। পদত্যাগের বিষয় নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমেদ। এছাড়া গত এক মাসে আরও অন্তত চারজন বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। ,
এদিন পদত্যাগকারী হলেন-প্রক্টর ও শহিদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, সহকারী প্রক্টর ও শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়। উভয় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন তারা। এছাড়া সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম, ড. রামেন্দু পারিয়াল, এসএএম জিয়াউল ইসলাম, গোলাম কুদ্দুস লাবলু ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. ওমর ফারুক পদত্যাগ করেছেন। আবাসিক হলের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষকরা হলেন এএফ রহমান হলের অনাবিল ইহসান, প্রীতিলতা হলের ফারজানা আফরিন রুপা, শহিদ আবদুর রব হলের ড. এইচএম আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের শাকিলা তাসমিন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের ড. মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা এবং আলাওল হলের ঝুলন ধর। ,
এর আগে মঙ্গলবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন আরেক সহকারী প্রক্টর মরিয়ম ইসলাম। ২৩ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন চবি প্রেসের প্রশাসক ড. আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। ৯ ফেব্রুয়ারি অব্যাহতি নেন আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. আফতাব উদ্দীন। ,
এদিকে পদত্যাগের এক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন প্রক্টর ও দুই সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নতুন প্রক্টর হয়েছেন মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম সিকদার। এরই মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই সহকারী প্রক্টর হলেন মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের প্রভাষক সৌরভ সাহা জয় ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের প্রভাষক রোকন উদ্দিন। তাদের দুজনকে এক বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব নিয়োগই ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে। ,
পদত্যাগ করা একাধিক শিক্ষক পূর্বকন্ঠকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে। তবে আমাদের নামে এমন কিছু অভিযোগ দেওয়া হয়েছে যেগুলোর সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই জড়িত নই। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণও করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই দায়িত্বে যে-ই আসুন, ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। ,
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধের জেরে শিক্ষকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।
পদত্যাগ করা এক শিক্ষক পূর্বকন্ঠকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে প্রশাসনকে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি। প্ল্যাগারিজম সফটওয়্যার কেনা, সমাবর্তন করাসহ সামষ্টিক স্বার্থের এসব দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কোথায় কোন শিক্ষক বা কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে-এসব দিকে মনোযোগ বেশি। এসব কারণেই আমি পদত্যাগ করেছি। এ দায়িত্বে ব্যয় করা সময় গবেষণার কাজে লাগালে আরও ভালো কিছু হবে। ,
চবির নতুন প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, সব সমস্যাকে উতরে নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আইনের কাছে সবাই সমান। আমি মনে করি, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেউ না কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেবেন। তবে তারা কোনো দ্বন্দ্বের কারণে নয়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। , পদত্যাগের বিষয়ে জানতে উপাচার্য শিরীণ আখতারকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তথ্যসুত্র: যুগান্তর। ,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন