হজে গিয়ে ভিক্ষা: সেই মন্টু দুই মামলার আসামি - পূর্বকন্ঠ

শিরোনাম :

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

হজে গিয়ে ভিক্ষা: সেই মন্টু দুই মামলার আসামি

সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে ভিক্ষা করার অপরাধে গ্রেপ্তার মতিয়ার রহমান মন্টু বাংলাদেশে দুই মামলার আসামি। তার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীতে ৬ বিঘা জমিও আছে। গাংনী থানা পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ৩০ বছর আগে নিজের বানানো বোমার বিস্ফোরণে হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মন্টুর। মেহেরপুরে মন্টুর গ্রামের বাড়ি ঘুরে, এলাকাবাসী ও তার স্ত্রী এবং জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জেনেছে পূর্বকন্ঠ। ,
মন্টুর বাড়ি গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের সিন্দুর কোটা গ্রামে। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী মমতাজ পারভীনের সঙ্গে।পূর্বকন্ঠকেমমতাজ বলেন, আমরা গরীব মানুষ, অভাবের সংসার। আমার স্বামী অচল মানুষ। তার দুই হাতের কবজি পর্যন্ত কাটা। মাঠে অল্প কয়েক বিঘা জমি আছে, তা আবাদে যা হয় তাতে সংসার চলে। মমতাজ জানান, তাদের সংসারে এক ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। বিশ বছর হয়েছে বিয়ের। সৌদি গিয়ে স্বামীয় আটক হয়েছেন বলে তিনি জেনেছেন। সোমবার সকালে মন্টুর সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়। মন্টু তাকে জানিয়েছেন যে তিনি ভালো আছেন। মমতাজ বলেন, তিনি (মন্টু) আগেও একাধিকবার ভারতে ও সৌদি আরবে গিয়েছেন। ,
যেতে নিষেধ করলেও শোনে না। তিনি কীভাবে হজে যান তা কখনও আমাকে বলেননি। কিছু জানতে চাইলে এড়িয়ে যেতেন। এবার বরিশালের মশিউর নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মন্টু হজে গিয়েছেন বলে জানেন মমতাজ। এর বেশি কিছু জানেন না বলে দাবি তার। এলাকার লোকজন এই প্রতিবেদকের কাছে মন্টুর নামে বিস্তর অভিযোগ জানিয়েছেন। মটমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ পূর্বকন্ঠকে বলেন, গ্রামের যত খারাপ শ্রেণির লোক আছে, সবার সঙ্গে মন্টুর সম্পর্ক আছে। ,

আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, মন্টু সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়ার নাম করে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ভিক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন। সেই টাকা দিয়ে গ্রামের মাঠে জমি কেনেন। মাস দুয়েক আগে আমার কাছে ওয়ারিশ সনদ নিতে এসেছিলেন। তারপরে আর তার সঙ্গে দেখা কিংবা কথা হয়নি। চেয়ারম্যান জানান, মন্টু এক সময়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও তিনি শুনেছেন। এখন গ্রামে তার বর্গা নেয়া জমি আছে ২ বিঘা ও কেনা জমি আছে ৬ বিঘা।,
মন্টুর প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন পূর্বকন্ঠকে বলেন, বিভিন্ন মামলায় মন্টু আগে জেল খেটেছেন। একবার রাজনৈতিক কারণে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। জানতে পেরেছি, সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করতেন। সেখান একটি বিবাহও করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার কিছুদিন পর ভারত থেকে এক নারী তার বাড়িতে এসে স্ত্রী বলে দাবি করেন। তবে কিছুদিন পর ওই নারী আবার চলে যান। ,

তবে তার ছেলে তাকে জানিয়েছে যে মন্টু তাকে কল করেনি একবারও। আমজাদ ও খায়রুল ইসলামসহ গ্রামের আরও কয়েকজন জানিয়েছেন, প্রায় ৩০ বছর আগে কুষ্টিয়ায় বোমা বিস্ফোরণে মন্টুর দুই হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে শুনেছেন। পরে চিকিৎসার সময় দুই হাত কবজি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। মটমুড়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম পূর্বকন্ঠকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে কুষ্টিয়ায় কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ডাকাতি করতে যান মন্টু। সে সময় তার সঙ্গে থাকা বোমাই বিস্ফোরিত হয়। তখন বিয়ে বাড়ির লোকজনই তাকে হাসপাতালে নেয়। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা শুনেছেন জানিয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকপূর্বকন্ঠকেবলেন, মন্টুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বোমা বানাতে গিয়ে তার হাত নষ্ট হয়ে গেছিলো।,
থানার রেকর্ড বই থেকে জানা গেছে তার নামে গাংনী থানায় ২০১১ সালের ১১ জুলাই বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছিল। এছাড়া ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল এলাকায় মারামারি ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছিল। যতদূর জানতে পেরেছি, তিনি ছাত্রজীবনে কুষ্টিয়াতে থাকতেন। হাত হারানোর ঘটনাটিও কুষ্টিয়ায় ঘটেছে। মন্টুর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন দলটির উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। তবে উপজেলা যুবদলের সেক্রেটারি জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, দলীয় কোনো পদ-পদবী ছিল না মন্টুর। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার উঠবস ছিল।,

কোন মন্তব্য নেই: