শফিকুল আলম শাহীন : নেত্রকোনার পূর্বধলায় পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে সফল হয়েছেন দুই ভাই। অল্প জমিতে প্রথমবার এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যখন তাদের সফলতা আসে তখন দ্বিতীয়বারের মতো সাফল্যের স্বপ্ন বুনছেন তারা। আদা চাষে তাদের সফলতার কাহিনি এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
বলছিলাম উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের হাটধলা গ্রামের মনিন্দ্র চন্দ্র দাসের দুই ছেলে রাখাল চন্দ্র দাস ও শান্ত চন্দ্র দাস নামের দুই ভাইয়ের কথা। তারা দুই ভাই পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে কথা হয় রাখালের ছোট ভাই শান্ত চন্দ্র দাসের সাথে তিনি জানান, গত বছর তিনি শেরপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। আর তার বড় ভাই রাখাল চন্দ্র দাস সিরাজগঞ্জের মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) থেকে ডিএমএফ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ইন্টার্নী করছেন।
শান্ত আরো জানান, আদা চাষের পুরো পরিকল্পনাটিই তার ভাই রাখালের। চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ইউটিউব দেখে আদা চাষের পরিকল্পনা করেন তারা। এরপর আদার চারা সংগ্রহ করে গত বছর বাড়ির আঙ্গিনায় মাত্র এক শতক জমিতে ২৪০টি বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। অল্প সময় ও স্বল্প পুঁজিতে বস্তায় আদা চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় এবার আরেকটু বড় উদ্যোগ নেন তারা।
এবছর বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে ও অল্প আবাদী জমিতে ১হাজার ৪শ’ বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এবার তারা আরো সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন।
মুঠোফোনে কথা হয় রাখাল চন্দ্র দাসের সাথে তিনি জানান, বসতবাড়ির আশপাশে বিভিন্ন গাছ-গাছালির নিচেও চাষ করা যায় আদা। মাটি, সার আর বীজ মিলে প্রতি বস্তায় তাদের খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর প্রতি বস্তায় গত বছর মিলছে এক কেজি থেকে দেড় কেজি আদা। প্রথমবারের মতো তারা আদা চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হওয়া এবার স্বপ্ন দেখছেন বড়। তাদের এ কাজ দেখে এলাকার অনেকে পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে পূর্বধলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর কবির জানান, বস্তায় আদা চাষ একটি আধুনিক পদ্ধতি। বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না। যা ছায়াযুক্ত স্থানে বিশেষ করে ফল বাগানে,বসতবাড়ির আনাচে কানাচে, পতিত জমিতে এই আদা চাষ করা যায়।
আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ করছি, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে তাদেরকে আদা চাষে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করতে পারেন। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ৫০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। আগামীতে এর পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন