{getBlock} $results={3} $label={রাজনীতি} $type={headermagazine}

আজ ,

⦿ এই মাত্র পাওয়া

ইয়াবা ও নারী ব্যবসায়ী : পূর্বধলার ঘটনায় আলোচনায় নতুন বাস্তবতা

অভিযানের সময় মরিয়মের স্বামী রানা খান পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রামজুড়ে শুরু হয় তীব্র আলোড়ন। কারণ এ দম্পতির বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল-তারা দীর্ঘদিন

শফিকুল আলম শাহীন : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের বাদেপুটিকা গ্রাম। চারপাশে সবুজ মাঠ, কৃষিনির্ভর শান্ত জনপদ। এই শান্ত গ্রামটির চিরচেনা নিস্তব্ধতা ভাঙে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) গভীর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে। ইয়াবা, ধারালো দেশীয় অস্ত্র, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থসহ মরিয়ম আক্তার (২৫) নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

এ সময় তার ঘর থেকে উদ্ধার হয় ১৪৭ পিস ইয়াবা, ছয়টি মোবাইল ফোন, একটি বড় চাকু এবং নগদ ৫৭ হাজার ৫০ টাকা। তবে তার স্বামী রানা খান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর তথ্যানুযায়ী, এই দম্পতি প্রতিদিন দেড় থেকে তিন লাখ টাকার ইয়াবা বিক্রি করত।

নারী ব্যবসায়ী : সামাজিক বাস্তবতায় নতুন প্রশ্ন-
মাদক ব্যবসায় পুরুষদের জড়িত থাকার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়, কিন্তু নারী ব্যবসায়ী আটক হওয়ার ঘটনা তুলনামূলক বিরল। মরিয়ম আক্তারের ঘটনা তাই নতুন করে ভাবাচ্ছে স্থানীয়দের।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “এখানকার ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে ইয়াবার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছিল। আমরা ভাবতাম বাইরে থেকে কেউ এনে দিচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, আমাদের আশপাশেই ব্যবসা হচ্ছিল।”

রাজিয়া নামে এক গৃহিণী মন্তব্য করেন, “নারীরা যদি মাদক ব্যবসায় জড়ায়, তবে এটা সমাজের জন্য ভয়াবহ বার্তা। কারণ তখন পরিবার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অস্থিরতা তৈরি হয়।”

যুব সমাজের সংকট:
ইয়াবা শুধু একটি ট্যাবলেট নয়, এটি ধীরে ধীরে পুরো একটি প্রজন্মকে গ্রাস করছে। পূর্বধলার বিভিন্ন গ্রামে এখনো নীরবে চলছে মাদক ব্যবসা। কর্মহীন তরুণরা প্রলোভনে পড়ে একদিকে যেমন মাদক সেবনে আসক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে আবার কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে ব্যবসায়। এতে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান :
অভিযান পরিচালনাকারী পূর্বধলা আর্মি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন জোহায়ের আনজুম আহমেদ বলেন, “রানা-মরিয়ম দম্পতি এলাকায় যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পূর্বধলা থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, আটককৃত নারীসহ জব্দ করা ইয়াবা, টাকা ও অস্ত্র থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে এবং পলাতক রানা খানকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া :
ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বাড়ছিল। এতে তরুণ প্রজন্ম বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। অনেক অভিভাবক আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, সহজে মাদক পাওয়া যাওয়ায় কিশোররা আসক্ত হয়ে পড়ছে। মরিয়মের মতো প্রভাবশালী নারী মাদক ব্যবসায়ীর আটক হওয়ায় অনেকে মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।,

সমাজের দায় ও করণীয়:
একটি গ্রামে যখন মাদক ব্যবসা শেকড় গেড়ে বসে, তখন শুধু পুলিশি অভিযান যথেষ্ট হয় না-সামাজিক প্রতিরোধও জরুরি হয়ে পড়ে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনপ্রতিনিধিদের একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে সাময়িক অভিযানে ব্যবসায়ী পালালেও শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে না।

তবে পূর্বধলায় যৌথবাহিনীর এই সফল অভিযান এলাকাবাসীর মনে এক ধরনের আস্থা জাগিয়েছে। তারা মনে করছেন, এমন ধারাবাহিক পদক্ষেপই পারে তরুণ সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে।

উপসংহার :
পূর্বধলার বাদেপুটিকা গ্রামের ঘটনায় স্পষ্ট হলো-মাদক ব্যবসার পরিধি আর সীমিত নেই, বরং তা সমাজের ভেতরেই গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। নারী ব্যবসায়ী ধরা পড়া নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখনই যদি কঠোর আইনগত ব্যবস্থা ও সামাজিক প্রতিরোধ একসঙ্গে জোরদার না করা যায়, তবে ইয়াবা একদিন পুরো প্রজন্মকে গ্রাস করবে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন