{getBlock} $results={3} $label={রাজনীতি} $type={headermagazine}

কংসের বুকে চেলি নৌকা- রামিমের জীবনের স্রোত

নদীপাড়ের এই ছেলেটি প্রায় পনেরো বছর ধরে মাছ ধরছেন এক বিশেষ নৌকা দিয়ে। স্থানীয়ভাবে একে সবাই বলে ‘চেলি নৌকা’।

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : ভোরের কুয়াশা তখনও কাটেনি। কংস নদীর শান্ত জলে ভেসে বেড়াচ্ছে সরু এক নৌকা। নৌকায় বসে আছেন তরুণ রামিম-চোখে একাগ্রতা, হাতে নেই জাল বা বড়শি। তবু মুহূর্তের মধ্যেই লাফিয়ে নৌকার ভেতরে পড়ছে একের পর এক মাছ। এই নৌকা, এই নদী আর এমনই এক অভিনব কৌশলই আজ তার জীবিকার ভরসা।

রামিমের বয়স চব্বিশ। বয়সে তরুণ, কিন্তু নদীর জলের মতোই অভিজ্ঞ। নদীপাড়ের এই ছেলেটি প্রায় পনেরো বছর ধরে মাছ ধরছেন এক বিশেষ নৌকা দিয়ে। স্থানীয়ভাবে একে সবাই বলে ‘চেলি নৌকা’। নদীতে নৌকা চালালেই পানির ধাক্কায় মাছ লাফিয়ে ওঠে নৌকার ভেতর। রামিমের ভাষায়, “এটা কোনো জাদু নয়, এটা কৌশল। পানি যখন জোরে বয়, তখনই মাছগুলো ভেসে ওঠে। নৌকা চালালে তারা ভয় পেয়ে লাফিয়ে পড়ে নৌকার মধ্যে।”

নিজস্ব নকশায় তৈরি এই নৌকার খরচ পড়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। নৌকার এক পাশে লাগানো আছে সাদা রঙের প্লেনশিট, আর সামনের অংশে রাখা থাকে ভারী পাথর—যাতে পানির ধাক্কা ঠিকমতো লাগে। নদীতে পানি বেশি থাকলেই কাজ দেয় এই নৌকা।

প্রতিদিন ভোরে আর বিকেলে—দু’বার তিনি যান নদীতে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত মাছ পান। সেসব মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এভাবেই চলছে তার সংসার।

রামিম জানান, “বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি আর ভাই মিলে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক। এই নদীই এখন আমাদের জীবন।”

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু সরকার বলেন, “রামিমের মতো তরুণদের এখন পাওয়া দুষ্কর। নদীর জলে সে নিজের বুদ্ধি আর কষ্ট দিয়ে টিকে আছে। তার চেলি নৌকা এখন গ্রামে এক উদ্ভাবনের গল্প।”

রামিমের জীবন হয়তো আলোকিত কোনো শহুরে গল্প নয়, কিন্তু তার সংগ্রাম এক নীরব প্রেরণা। আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের ভিড়ে সে যেন মনে করিয়ে দেয়- পরিশ্রম আর উদ্ভাবন থাকলে নদীর জলের মধ্যেও পাওয়া যায় জীবনের দিশা।

কংস নদীর স্রোত যেমন থেমে থাকে না, তেমনি থেমে থাকে না রামিমের নৌকা। প্রতিদিন ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সে নেমে পড়ে জীবিকার অভিযানে-চেলি নৌকায় ভর করে বয়ে চলে জীবনের স্রোতে।

একটি মন্তব্য করুন

ads
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন