কোভিড-১৯ রোগের সম্ভাবনাময় যত চিকিৎসা
১০. রেমডেসিভির
৯. ক্যালেট্রা
এই ওষুধ দুটি আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং এখন কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাদের সুস্থ হতে সাহায্য করবে এই প্রত্যাশায়। ওষুধ দুটি রোগীর ফুসফুসের অতিরিক্ত প্রদাহ বন্ধ করে ফুসফুসকে সচল রাখে, যা ভাইরাসটিকে স্থির করতে সহায়ক হতে পারে। উভয় ওষুধের ক্লিনিক্যাল টেস্ট চলছে এবং শিগগির এর কার্যকারিতা নিয়ে নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যাবে।
এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যেসব ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের রক্তের প্লাজমা বা রক্তরস ব্যবহার করে আক্রান্ত অন্য রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। রক্তের এই প্লাজমাতে অ্যান্টিবডি রয়েছে যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। ফলে অন্যান্য অসুস্থ রোগীদের লড়াই করতে সক্ষম করতে পারে। কেননা করোনাভাইরাস আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়া ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় আর সেটাই অন্য রোগীর শরীরে থাকা ভাইরাসটি নির্মূল করতে পারে। এই পদ্ধতির বেশ কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইতিমধ্যে করা হয়েছিল এবং ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে।
ক্লোরোকুইন হলো ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় বহু প্রচলিত এবং বহু পুরোনো একটি ওষুধ, যা কোভিড-১৯ চিকিত্সার ক্ষেত্রে আমাদের বড় আশা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ওষুধের সম্ভাবনা থাকার কারণে বেশ কয়েকবার এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওষুধটি মজুদ করেছে। এই ওষুধের ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ নামক একটি নির্দিষ্ট সংস্করণও রয়েছে। উভয় ওষুধের কোনোটির কাছেই এখনো ক্লিনিক্যাল প্রমাণ নেই যে, নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সহায়তা করতে পারে। ওষুধগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে আরো টেস্ট প্রয়োজন হবে।
অ্যাভিগান হচ্ছে একটি ওষুধ যা ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। নভেল করোনাভাইরাসটির বিরুদ্ধে দক্ষতা পরীক্ষা করার সময় এটি অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। ওষুধটি নিয়ে বর্তমানে প্রচুর পরীক্ষা চলছে এবং ফলাফলগুলো খুব শিগগির পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলো, ওষুধটি কোভিড-১৯ রোগীদের দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করেছিল এবং তাদের কিছু লক্ষণ হ্রাস করেছে।
টিএকে-৮৮৮ হলো একটি বিশেষ হাইপারইমিউন গ্লোবুলিন চিকিৎসা, যা নিয়ে জাপানের বিখ্যাত একটি ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগীদের রক্ত থেকে এটি উত্পাদন করার উপায় আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে। যদি তারা সফল হয় তাহলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হবে। আশা করা হচ্ছে, এই প্লাজমা থেরাপিটি এ বছরের শেষ নাগাদ করোনা রোগীদের জন্য পাওয়া যাবে।
এই অ্যান্টিবডি চিকিত্সাটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপলিসের ওষুধ কোম্পানি এলি লিলি কানাডার ওষুধ কোম্পানি অ্যাবকেলেরার সাথে যৌথ উদ্যোগ তৈরি করেছে। তারা জুলাইয়ের শেষ নাগাদ এই চিকিত্সাটির পরীক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে এবং এটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে সক্ষম হতে পারে। তারা মানুষের মধ্যে ৫০০টিরও বেশি অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল, যা ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারে।
এটি সান ফ্রান্সিসকোর ভিআইআর বায়োটেকনোলজির উদ্ভাবিত একটি পৃথক অ্যান্টিবডি চিকিত্সা। গবেষণা সংস্থাটি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সহযোগিতায় নভেল করোনাভাইরাস চিকিৎসা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তাদের গবেষণা কবে নাগাদ শেষ হবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে সংস্থাটি মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য যোগ্য অংশগ্রহণকারী নির্বাচনের কাজ করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর চিকিত্সায় সবচেয়ে সম্ভাবনায় কিছু ওষুধ নিয়ে এ প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় অন্যান্য আরো অনেক ওষুধ প্রতিদিন পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সেগুলোর প্রতিটি সম্ভাব্য নিরাময় হতে পারে। অ্যান্টিবডি হোক বা ওষুধ, বিশ্বজুড়ে গবেষকরা এই মহামারি থেকে বিশ্বকে মুক্তি দেওয়ার প্রয়াসে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
ওষুধগুলো রোগীদের ওপর পরীক্ষা করার আগে গবেষণাগারে পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে, আর তাই আমাদের মনে হতে পারে যে দীর্ঘ সময় লাগছে। যাহোক, এটি সহজ কোনো কাজ নয়। কোনো ওষুধ কাজ করে কিনা সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের নিশ্চিত হওয়া লাগে, আমাদের আশা দেওয়ার আগে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন