শীতের পিঠা বিক্রি করেই চলে রমিজের অভাবের সংসার
তোবারক হোসেন খোকন, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) :
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের রমিজ উদ্দিন (৫৭) শীতের পিঠা বিক্রি করেই চালাচ্ছেন সাধের সংসার। এক ছেলে ঢাকায় কাজে চলে যাওয়ার পর ঋণ ও কর্জ করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে অভাব-অনটনে সংসারের চাকা ঘোরাতে অবশেষে শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন।
প্রায় ৫ বছর ধরে শীতের পিঠা বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। শুধু রমিজ উদ্দিন নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামবৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার এমন অনেকের সংসারই চলছে নানা ধরনের কাজ করে।
শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা আর পুলির আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই করা হয় প্রায় প্রতিটি বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে শীতের পিঠা বানিয়ে খেতে পারে না। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পিঠার দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মিটাচ্ছে। এ মৌসুমে রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে ওঠে বাহারি শীতের পিঠার দোকান।
শনিবার বিকেলে রমিজ উদ্দিন পূর্বকন্ঠকে বলেন, খেজুর গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা আর চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা। শীতের পিঠা হলেও বছরের প্রায় সব সময়ই তিনি পিঠা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। পিঠা বিক্রির টাকা দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৫ বছর ধরে শীতের পিঠা করেন, প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক পিঠা বিক্রি করেন তিনি।
চালের গুঁড়া, গুড়, লাকড়ি ও অন্যান্য খরচ বাদে ৫০০-৬০০ টাকা লাভ হয় দিনে। সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যায় পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। সন্ধ্যার সময় পিঠা কিনতে দোকানে সিরিয়াল দেন ক্রেতারা। তা ছাড়াও অনেকে বেশি পিঠা প্রয়োজন হলে ২/১ দিন আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যান।
‘তার জীবনের কোন ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে রমিজ উদ্দিন বলেন, নদীতে আমার বাড়ীর অনেকটা জায়গা ভাইঙ্গা নিছে, আমার তেমন ভালো বাড়ী নাই, কাউন্সিলরের কাঝে বলছি আমারে একটা সরকারি ঘর আর আমার স্ত্রীর চিকিৎসার লাগিন কিছু ট্যাহা দিতো, আমি ভালই আছি আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। একথা বলেই খেজুর গুর মিশিয়ে আপন মনে বানিয়ে চলছেন ভাপা পিঠা।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন