গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সারাদেশে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই ধাপে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচন কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন হলো। অংশগ্রহণ মূলক এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিচারে ২টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ,আর বাকী ০৮টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় নতুন করে নির্বাচন পরবর্তী আলোচনার ঝড় তুলেছে।
নির্বাচনপূর্ব মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভক্তির সুযোগে বিরোধী দল প্রতীক বিহীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাংখিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলো তারা মুলত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবেই জয়লাভ করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে রায়টি কি বিদ্রোহীদের বিপ্লবেরই ফসল ? হতেও পারে, কারন, বিপ্লবের মধ্য দিয়েই সাধিত হয় পরিবর্তন সৃষ্টি হয় নতুন কিছু। অনেকেই হয়তো অভিমান করে বলছেন, "প্রতীক হেরেছে,জনগন জিতেছে"-এটিও হতে পারে কারন,"জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলনই সরকারের সফলতা" অন্যদিকে বিরোধী দল বলছে, নৌকার ধ্বংস নেমেছে ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে নৌকার ভোট বেড়ে দ্বিগুনে উন্নীত হয়েছে। কারন বিজয়ী এবং পরাজিত দু'পক্ষই আওয়ামী লীগের এই দু'পক্ষের মাঝামাঝি বসে একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি দলীয় প্রতীক এবং প্রার্থীকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করিয়ে লুটেছে ফায়দা।
নির্বাচনী মাঠে প্রচারিত ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রশ্নে জনগনকে করা হলো বিভ্রান্ত দোষ দেওয়া হলো ক্ষমতাসীন দলের উপর।তাইতো বিভ্রান্ত জনতা মুখ ফিরাতে শুরু করলো দলীয় প্রতীকের উপর থেকে বিদ্রোহীরা ভোটারের ভোটাধিকার রক্ষার আশ্বাস দিল জনতা তাদের আশ্বাসের বিশ্বাসে নিশ্বাস ফেললো। আসলেই কি ২৮ই নভেম্বর সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো?যদি তাই হতো, তাহলে কি মাত্র ৪৯টি ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীককে হারানো যেতো? তাহলে কারা এগুলো করেছে কি জন্য করেছে এর অন্তর্নিহিত কারন খুজে বের করা খুবই জরুরি।রাষ্ট্র নাগরিককে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করবে সেটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।কিন্তু এটিকে পুঁজি করে একশ্রেনীর অসাধু ব্যক্তির শঠতা এবং স্বার্থপরতা বাঙ্গালির নির্বাচনী ঐতিহ্যের কাংখিত প্রতীককে বহুলাংশে করেছে বিপর্যস্ত।বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত।
পৃথিবীর ইতিহাসে গনতন্ত্রের সুচনালগ্নে ফরাসী বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের মানুষ রাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখেই বিদ্যমান বৈষম্য ও দুর্নীতিরোধে কিছু সংস্কারের দাবি উত্থাপন করেছিল কিন্তু রাজার অমনোযোগীতায় রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে সমাজকে করেছিলো কুলষিত তাই কুলষিত সমাজ পরিবর্তনে বিপ্লব হয়ে পড়েছিল অনিবার্য কিন্তু সেদিন সেই বিপ্লবকে হয়তো এড়ানো যেতো যদি জনতা কতৃক উত্থাপিত প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধিত হতো।
তাই ২৮ই নভেম্বর পূর্বধলায় ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে "বিপ্লবের সন্তান" হিসাবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের কাছে সংস্কারের অনিবার্যতাটি অপরিহার্য না হলেও সমর্থিত হওয়া উচিত।কারন সমকালীন ফ্রান্সে অভিজাত এবং যাজকরা নির্বঘ্নে রাষ্ট্রের সকল সুবিধা ভোগ করলেও সাধারণ মানুষ তাদের পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ থেকে রাষ্ট্রকে কর দিতে বাধ্য করা হতো। তেমনি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করেও আমরা আমাদের পরিশ্রমের ঘামে অর্জিত অর্থ ছাড়ে অভিজাত দের প্রভাব অতিক্রমে ব্যর্থ, আমরাও আজ ক্লান্ত তাই সমকালীন ফ্রান্সের বিপ্লবীদের সুরে বলতে চাই বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শকে রক্ষায় ঐক্যের বিকল্প নেই।
পূর্বধলার বিষাক্ত হাওয়া সমাজকে যেভাবে কুলষিত করছে সেটি চলমান থাকলে, সেদিন আর বেশী দুরে নয়, যেদিন আপনার পুর্বধলাও আপনার কাছে অপরিচিত হয়ে যেতে পারে। তাই এখনই সময় পরিবর্তন অতীব জরুরি সংস্কার অপরিহার্য।
লেখক: মোঃ এমদাদুল হক, প্রভাষক- ইতিহাস বিভাগ, পূর্বধলা সরকারি কলেজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন