শেরপুরের ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা মাঠে সরগরম
তপু সরকার হারুন,শেরপুর প্রতিনিধিঃ ইংরেজ আমলের প্রথম থেকেই শেরপুর শহর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার প্রধান ৫টি শহরগুলের অন্যতম ছিল শেরপুর ।
এবং ১৮৭২ সনের জানুয়ারী মাসের প্রথমবারের মত আদমশুমারী অনুয়াযী মাত্র পাঁচটি শহরে লোক গণনা করা হয়। এর মধ্যে শেরপুরের লোকসংখ্যার মধ্যে ৪,২৯৭ জন মুসলমান ও ৩,৭১৮ জন হিন্দু ছিল। ইংরেজ সরকার শেরপুর শহরটির উন্নতিকল্পে ও শহরবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াত সুবিধার জন্য আদমশুমারীর কয়েক বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালের ১লা এপ্রিল তারিখে শেরপুর পৌরসভার পত্তন করেন।
১৯৬৯ সনে প্রকাশিত অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের ‘‘সেরপুরের ইতিকথা’’ গ্রন্থে শেরপুরশহরের আয়তন ৯.১/২ বর্গমাইল বলে উল্লেখ করেছেন। এই শহরের লোকসংখ্যা সম্পর্কে যদ্দুর জানা যায় ১৯১১ সনে ছিল ১৫,৫৯১ জন, ১৯২১ সনে হয় ১৭,৮১৩ জন এবং ১৯৬৯ সনে এসে দাড়ায় ২৪,৯২৪ জন। তন্মধ্যে ১৩,১১৩ জন পুরুষ, ১১,৮১১ জন স্ত্রী এবং ১৯,২৮৯ জন মুসলমান, ৪,২৫৮ জন হিন্দু, ১,২৮৫ জন্য নীচু জাতের হিন্দু, ৯১ জন গারো ও খ্রিষ্টান এবং ৪ জন্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছিল। ‘‘শেরপুর জেলা শুভ উদ্বোধন’’ নামে এক স্মরণিকায় ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সনে শেরপুর শহরের লোকসংখ্যা বলা হয়েছে ৫১,৮৫৪ জন।
(১৯২৭ সন হতে) মহাশয় স্বীয় পিতৃদেব স্বর্গীয় রায়বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের স্মৃতিকল্পে মিউনিসিপ্যালিটিকে দান করিয়াছেন। এই অফিস ভবন নির্মাণ কার্য্য শেষ হইলে উহা ‘‘চারু ভবন’’ নামে অভিহিত হবে। পরবর্তীতে ‘চারুভবন’ নামকরন করা হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই‘‘চারুভবনআজকের শেরপুর শহরেকে ৩০/৪০ বছর আগে ‘‘সেরপুর টাউন’’ লিখা হতো। শিক্ষিত প্রবীন ব্যক্তিদের কাছে শুনা যায় দক্ষিন আফ্রিকার কেপ-টাউন, আমেরিকার জজ-টাউনের পরেই পূর্ব পাকিস্তানের ‘‘সেরপুর টাউন’’খ্যাত ছিল। আবার হরচন্দ্র চৌধুরী তার বইয়ে ‘‘সহর সেরপুর’’ লিখেছেন।এই ‘সহর সেরপুর’ বা শেরপুর শহর ৩০টি মহল্লায় বিভক্ত ছিল।বর্তমানে ২৪.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট শেরপুর পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৪১ টি মহল্লায় ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী ৯৭,৯৭৯ লোকের বসবাস
স্বাধীনতা উত্তর কালে ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের বিধান অনুসারে প্রথম অনুষ্ঠিত শেরপুর পৌর নির্বাচনে পৌর ভোটারদের সরাসরি ভোটে প্রবীণ জননেতা ‘‘খন্দকার মজিবর রহমান’’ চেয়ারম্যান এবং ছাত্রনেতা ‘‘আমজাদ হোসেন’’ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন । বর্তমানে ৪০টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ৩৬৯৮৬ এবং ৩৯১৭৭ মহিলা ভোটার সব মিলিয়ে ৭৬১৬৩ ভোটারে ৯টি সাধারন ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা ওয়াড্র্ নিয়ে শেরপুর পৌরসভা গঠিত
তফসিল ঘোষণা করা না হলেও শেরপুর পৌরসভায় বইছে র্নির্বাচনী হাওয়া। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মেয়র, সাধারণ এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। তবে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর কেউ এখনো প্রচার-প্রচারণা শুরু করেনি।
সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে যোগদানসহ পাড়া-মহলস্নায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। শত শত মটরসাইকেল বাইক নিয়ে শো-ডাউন এবং
নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সমর্থকরা শহরে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন। প্রার্থীদের পক্ষে ফেসবুকেও চালানো হচ্ছে প্রচারণা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর পৌর সভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, আগামী নির্বাচনেও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ইতোমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের সর্বশেষ বিশেষ বর্ধিত সভায় নিজের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন।
এছাড়া শেরপুর জেলা আওয়ালীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আনোয়ারুল হাছান উৎপল, ও জেলা আওয়ালীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা আওয়ালীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শিল্পপতি আনিসুর রহমান ও শ্রমিক নেত আরিফ রেজা ।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র এডভোকেট আব্দুল মান্নান, জেলা বিএনপির ১নং –সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক এ বি এম মামুনুনর রশিদ (পলাশ) সাধারণ সম্পাদক, ও সাবেক ছাত্র নেতা ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু-রায়হান (রুপন) এবং জেলা বি এন পির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হাছানুর রেজা জিয়া ও স্বতন্ত্র মাওলানা কামারুজ্জামান মেয়র পদে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শেরপুর পৌর সভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ,গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
ইতিমধ্য শেরপুরের গন সানুষের নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ৫ বারের নির্বাচিত এম পি এবং সংসদের সম্মানিত হুইপ মহোদ্বয় জেলা আওয়ামীলীগের একটি মিটিংয়ে
তিনি বলেন, নির্বাচনে দলের কাছে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তৃণমূলের নির্বাচনের মতামতের ভিত্তিতে নাম বাছাই হতে পারে এবং তার পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র এডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করবে। আমরা প্রত্যাশা করি জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসব মুখরভাবে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন